বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাড়তে চলেছে ওষুধের দামও


নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাড়তে চলেছে ওষুধের দামও। চলতি মাস থেকেই কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যতম একটি ওষুধের দাম বেড়ে গিয়েছে। ফারাক দেখা যাচ্ছে অন্য কিছু কিছু ওষুধ-মূল্যেও। আর এবার সেই তালিকা দীর্ঘতর হবে। আগামী দিনে আরও একঝাঁক ওষুধের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট অনুমতি পেলেই ওই দামবৃদ্ধি কার্যকর করা হবে। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের আবহে এই অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে নিয়ে সরকারের অন্দরেও দ্বিধা তৈরি হয়েছে।
দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা এবং উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি চিঠি লেখা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে উপকরণ ও কাঁচামালের দাম অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদনের খরচ আর আয়ত্তে নেই। তাই সরকার যেন ওষুধের মূ঩ল্যের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ঊর্ধ্বসীমা পরিবর্তন করে এবং অনুমোদন দেয় দামবৃদ্ধির। ওই অনুমোদন দিতে হলে ড্রাগ প্রাইসিং কন্ট্রোল অর্ডারের সংশোধন করতে হবে। কারণ, ওই বিধি অনুযায়ী ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি এক বছরে মাত্র একবারই নির্দিষ্ট কম্পোজিশনের ওষুধের দাম বাড়ানোর অনুমোদন দিতে পারে। একই বছরে আবার দাম বাড়াতে হলে সেই বিধি-নিয়মের বদল করতে হবে। সরকার ওই আবেদন খতিয়ে দেখছে। ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাম বাড়ানোর ব্যবস্থা করা না হলে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর উৎপাদন আচমকা বন্ধ হলে বিপুল সঙ্কট তৈরি হবে স্বাস্থ্য পরিষেবায়।
ওষুধ উৎপাদনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণের সিংহভাগ চীনের সরবরাহ করা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই চীন থেকে ওইসব কাঁচামালের জোগান কমতে শুরু করে। তার মধ্যে আবার শুরু হয় চীনকে বয়কটের ‘কর্মসূচি’। তার ধাক্কা আরও বাড়ে ওষুধ শিল্পে। ভারতের ওষুধ শিল্পে চীন থেকে কাঁচামাল আসার প্রক্রিয়ায় ধস নেমে যায়। আর তার ফলে ওষুধ উৎপাদনে সবথেকে জরুরি উপকরণ অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টেস (এপিআই) বহুমূল্য হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিতভাবেই ওষুধ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই অ্যাজিথ্রোমাইসিন, নিমুসুলামাইড, প্যারাসিটামলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়েছে, কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কেমিক্যাল উপকরণের দাম প্রায় তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।
ভারত সরকারের ড্রাগ প্রাইসিং কন্ট্রোল অর্ডার অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি বছরে ১০ শতাংশের বেশি দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। গত বছর ডিসেম্বর মাসে দাম বেড়েছিল। কিন্তু উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে, অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারি মাসেই এক দফা দাম বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি আরও বেহাল হয়েছে তারপর।
অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টেস চীন থেকে আমদানি করলে যা খরচ হয়, ভারতে বানালে তা এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়ে। এই মুহূর্তে সেটাই হচ্ছে। এই অবস্থায় সম্প্রতি ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় একটি ইঞ্জেকশনের দাম একবারে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং ওই ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হলে কোভিড রোগীদের হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমে চিকিৎসার খরচও পাল্লা দিয়ে বাড়বে।


Share This

0 Comments: