মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০

অতিবৃষ্টি ও অতি জোয়ারে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে

অতি জোয়ারে দেশের দণিাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে

বন্যাকবলিত এলাকা
বন্যাকবলিত এলাকা 
মোরশেদ আলম, বাংলাদেশ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই অতিবৃষ্টি ও অতি জোয়ারে দেশের দণিাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও অতি জোয়ারের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসমূহের পানিসমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এসব অঞ্চলের কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর, বুড়িশ্বর, নয়াভাঙ্গানি ও মেঘনা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার উপকূলীয় বন্য সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয়ও দক্ষিণ-মধ্য অঞ্চলে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে (১৭-১৮ আগস্ট হতে) মাঝারি থেকে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) ও কিছু স্থানে অতি ভারী (১০০ মিলি মিটারের বেশি) বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরে লঘু নিম্নচাপ অমাবস্যার প্রভাবে সাগরে ̄স্বাভাবিকের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ার দেখা যাচ্ছে।বাগেরহাটে গত পাঁচদিন অতিবৃষ্টির সাথে প্রবল বেগে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। বহু পরিবারের রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা অনেক এলাকায় খাল আটকে চিংড়ি চাষ করার কারণে পানি না নামতে পারায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। অবিরাম বৃষ্টির সাথে প্রতিদিনই প্রবল বেগে জোয়ারের পানিতে দুই বার ডুবছে বাগেরহাট জেলা শহরের নিম্ন এলাকা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা।

সদর উপজেলার চরগ্রাম, মাঝিডাঙ্গা, ভদ্রপাড়াসহ অন্তোত ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া, বহরবুনিয়া, জিউধরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, পৌর শহর, ঢুলিগাতি, তেলিগাতি, সানকিভাঙ্গাসহ ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে এসব এলাকার মাছের ঘের। জোয়ারের পানিতে কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর, ভান্ডারকোলা, পদ্মনগর গ্রামের কিছু আংশিক প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামেও ভেসেছে মাছের ঘের। রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েকশ মাছের ঘের। পানিবন্দি রয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মোংলা, ও শরণখোলা উপজেলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবজি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক য়তি হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।

গ্রামের বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকেছে
গ্রামের বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকেছে
বাগেরহাট সদর উপজেলার চরগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত চার পাঁচদিন ধরে জোয়ারের চাপে গ্রামের বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকেছে। আমার ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও গোয়ালঘর ডুবে গেছে।’ রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নুরুল আমিন বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার ইউনিয়নের কয়েক'শ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানি উঠেছে মসজিদ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভবনে। তবে স্থানীয় মানুষ এসব বিভিন্ন দুর্ভোগের দাবি করলেও মৎস্য, কৃষি, জেলা প্রশাসনসসহ কোন দপ্তরই সঠিক পরিমাণ জানাতে পারেননি। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেখান থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হবে বলে জানান তিনি।


সাতক্ষীরায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বাঁধ ভেংঙ্গে প্রায় প্রতিটি এলাকা প্লাবিত হতে শুরু হয়েছে। এই বাঁধগুলো সব ভেঙে গিয়েছিল ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময়।প্রতাপনগরের সঙ্গে আশাশুনি ও সাতীরার যোগাযোগের একমাত্র প্রধান সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে চলছে টানা বৃষ্টি, বিশেষ করে শুক্রবার সারা রাত বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভারী করে তুলেছে। প্রতাপনগরের সাবেক ইউপি সদস্য শেখ আজুয়ার রহমান বলেন, গতকাল শুক্রবারের টানা বর্ষণে সাতীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের পাশাপাশি, শ্রীউলা ও শ্যামনগরের গাবুরায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। মানুষের দুর্দশা বর্তমানে চরমে। তবে গোটা প্রতাপনগরের পরিস্থিতি সব থেকে ভয়াবহ। মানুষের দুঃখ দুর্দশা সেখানে চরমে। স্থানীয় গৃহবধূ আসমা খাতুন জানান, সেখানে পানি সরার কোনো পরিস্থিতি নেই। নদী, লোকালয় রাস্তা সবকিছু একাকার হয়ে গেছে। খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। মানুষের মতোই প্রাণীকুলের অবস্থা সংকটজনক। যেসব আশ্রয় কেন্দ্র ও সাইকোন শেল্টার ছিল তার নিচতলাও প্লাবিত হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে সংকট আরও তীব্র হয়েছে। স্থানীয় প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ধরনের উদ্যোগ নিল না। আজ মূলত তাদের গাফিলতির কারণেই এই সংকটের মুখোমুখি হলো গোটা ইউনিয়নবাসী। এদিকে চরম মানবেতর পরিস্থিতি হলেও কীভাবে তিনি সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন তা উর্ধ্বতন কেউ দেখতেও আসেননি বলে অভিযোগ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতীরা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমারের সঙ্গে বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ চলছে সেখানে। আমি দ্রুত সেখানে চলে যাবো। সাতীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি প্রকৃতিগত সংকট। আমাদের কারও কোনো হাত নেই। তবে এটি নিয়ে কী করা যায় তার জন্য তিনি আশাশুনি সদরে ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছেন বব

Published on

25/08/2020 06:46

Published By: BIPRADIP DAS


Share This

0 Comments: