যশোর জেলার চিত্র দেখে মনে হচ্ছে মানুষ এখন আর করোনার ভয় করছেন না
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী |
জাহিদ হাসান,যশোর-বাংলাদেশ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের যশোরে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত শুক্রবারও নতুন করে ৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে মোট জেলায় মোট করোনায় আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়ালো ৩১৩২ জন। বর্তমানে করোনা রোগী বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অসচেতনতা। যশোর জেলার চিত্র দেখে মনে হচ্ছে মানুষ এখন আর করোনার ভয় করছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে সারা বাংলাদেশের শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা।
এরপরেও মানুষের মাঝে সচতেনতা বাড়েনি। বরং আগের চেয়ে কমেছে। যশোর শহরের দড়াটানা মোড়ের ভৈরবপাড়ে চটপটি ফুচকার দোকানকে ঘিরে মানুষের ভিড় লেগে থাকছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্পট ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
সরকারের নির্দেশনা মানছেন না কেউ। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে চলাচল করছে মানুষ। সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি বাজার, ঝাউদিয়া বাজার, চান্দুটিয়া বাজার আমবটতলা বাজার, কাশিমপুর বাজার, সাতমাইল বারীনগর বাজার, মনোহরপুর বাজার, হাশিমপুর বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। চায়ের দোকানে মানুষের ভিড়। করোনার দাপটের মধ্যেও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়েনি। স্বাভাবিকভাবেই সব কার্যক্রম চলছে। সরকার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও অনেকই তা মানছেন না। প্রতিদিন নতুন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও হুমকির মধ্যে পড়ছে। মানুষের আচরণ ও চলাচল দেখে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস বলতে কিছুই নেই। তাদের মাঝে কোনো আতংক নেই। এদিকে ইজিবাইক ও থ্রি হইলারে যাত্রী গায়ের সাথে গাঁ ঘেষে বসানো হচ্ছে। অথচ যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারণে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে গাড়িখানা রোডের পুলিশ ক্লাব মাঠে কৌশলে মেলার আয়োজন করেছে একটি চক্র। বর্তমানে স্টলে পসরা সাজানোর কাজ চলছে। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মেলা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা মেলা মানেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সচেতন মহলের দাবি, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মেলার আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করা হোক।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, বর্তমানে শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি নিয়মনীতি না মানলে করোনা পরিস্থিতি আরো বাড়ার আশংকা রয়েছে। ফলে করোনার দাপট কমাতে হলে জনসচেতনতার বিকল্প কিছুই নেই। জনসচেতনতার জন্য প্রতিটি উপজেলা , ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে গঠন করা কমিটির সদস্যরা কাজ করছেন। কিন্তু জনগণ তা বেশি সময় মনে রাখছেন না।
সব ধরনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক গণজমায়েত ও মেলা এড়িয়ে চলতে হবে। সিভিল সার্জন আরো জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ও সব ধরনের কঠোরতা বাড়াতে হবে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মানুষ ভয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সচেতন হবে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত জেলার ১৩০৬২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পেয়েছি ১১৯২০ জনের। এরমধ্যে ৩১৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সুস্থ হয়েছেন ১৯১৯ জন। এছাড়া ৪০ জন মারা। এরমধ্যে খুলনার হিসেবে ২ জনের নাম রয়েছে। যশোরের করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিংয়ে প্রচারণা ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করে। আইন না মানার বিষয়ে পুলিশ র্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা প্রতিনিয়ত টহলে দিচ্ছে। মাস্ক না পরা মানুষের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে নেমেছে। প্রয়োজনে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।
Published on
30/08/2020 08:35
Published By: BIPRADIP DAS
0 Comments: