সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

পলাশির প্রান্তের যুদ্ধে সেনাপতি মীর মদনের ভূমিকা কেমন ছিলো

বীর সেনাপতি মীর মদনের সমাধি
বীর সেনাপতি মীর মদনের সমাধি | ছবিটি নেওয়া হয়েছে Wikimedia Commons থেকে 

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ পলাশি মানেই বিশ্বাসঘাতকতা, পরাজয়, বাংলা বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়া, পলাশীর প্রান্তে সেদিন বিশ্বস্ত সেনাপতিদের মধ্যে যারা যারা ছিলেন তাদের অন্যতম আমৃত্যু পর্যন্ত লড়ে ছিলেন তিনি হলেন সেনাপতি মীর মর্দান। 

জানা গিয়েছে, সেনাপতি মীর মদন ঢাকার হাসানউদ্দিন খানের অধীনে কাজ করতেন। হাসানউদ্দীন খান ছিলেন নবাব হোসেন কুলি খানের ভ্রাতুষ্পুত্র। মীর মদনকে তার বিশ্বস্ততা ও তার কর্মদক্ষতার জন্য বাংলার নবাব আলীবর্দী খান নিজেও পছন্দ করতেন। সিরাজ যখন নবাব হন তখন মীর মদনকে ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে  এসে সেনাপতির আসনে বসান, নবাব সিরাজ তাকে 'বখশী' উপাধি দেন, নবাব সিরাজ-কে সরাতে সক্রিয়ভাবে বিশ্বাসঘাতক জগৎশেঠ মাহতাব চাঁদ, মীর জাফর, উমিচাঁদ, স্বরুপচাঁদ, ইয়ার লতিফ, রায়দুর্লভ, ঘষেটি বেগমদের ক্ষমতার লোভ। তার সাথে রাজা রাজবল্লভ, মহারাজ নন্দকুমার,কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাহাদুর, রানী ভবানী প্রমুখের প্রচ্ছন্ন সহায়তা ছিলো মীরজাফর এবং লর্ড ক্লাইভের সাথে। 

অনন্য দিনের মত, সেদিনও উঠেছিল সূর্য, কিন্তু সেদিনই উঠে ডুবে গেলো স্বাধীনতার সূর্য, পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজের পক্ষে ছিল ৫০,০০০ সৈন্যের বিশাল বাহিনী, অস্ত্র, গোলাবারুদ, হাতি, ঘোড়া কোনোদিক থেকেই পিছিয়ে ছিল না নবাবের বাহিনী। আর ইংরেজ পক্ষে ছিল মাত্র হাজার তিনেক সৈন্য, তাও অপ্রশিক্ষিত এবং ভাড়া করে নিয়ে আসা। কিন্তু নবাবের সেনাদের মধ্যে ৪০,০০০ সৈন্যই ছিল মীর জাফর সহ বিশ্বাসঘাতক সেনানায়ক রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফদের অধীনে। আর যুদ্ধক্ষেত্রে তারা নিয়েছিল নীরব ভূমিকা।এই যুদ্ধে সেনাপতি মীর মদন ও মোহনলাল ছাড়া আর যে কয়েকজন নিজের বাংলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, তারা হচ্ছেন- বন্দুক বাহিনীর কমান্ডার বাহাদুর আলি খান, গোলন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নয়ে সিং হাজারি প্রমুখ।  

যুদ্ধের প্রথমেই বীর সেনাপতি মীর মর্দান ইংরেজ বাহিনীকে একদম কোণঠাসা করে ফেলেন। তবে ইংরেজরা এতটা প্রতিরোধ আশা করেনি নবাবের বাহিনী থেকে। ক্লাইভ বিচলিত হয়ে গেছিলো! কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলো না! তখনিই মীর জাফরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন ক্লাইভ, কেন এমন প্রতিরোধ হচ্ছে? মীর জাফর তাকে উত্তর পাঠান, নবাবের বাহিনী কোনো যুদ্ধ করছে না, যারা লড়ছে তারা মীর মর্দান আর মোহনলালের বাহিনী। শুধু তাদের পরাস্ত করতে পারলেই হবে, আপনি জিতে যাবেন।   

পলাশী স্মৃতিস্তম্ভ
ছবিঃ পলাশীর স্মৃতিস্তম্ভ 

তারপর যুদ্ধ চলতে থাকে সকাল থেকে একভাবে। হঠাৎ দুপুর নাগাদ আকাশে জমে আশে মেঘ। শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি পলাশিতে। ধুরন্ধর ইংরেজ বাহিনী নিজেদের কামান আর গোলাবারুদ তারপুলিন দিয়ে ঢেকে ফেললেও নিজেদের কামান আর গোলাবারুদ ঢাকতে ব্যর্থ হয় নবাব সিরাজের সেনা বাহিনী। যার ফলে বৃষ্টিতে ভিজে অকার্যকর হয়ে যায় নবাব বাহিনীর গোলাবারুদ। 

হঠাৎ দুপুর বেলা তিনটার দিকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হঠাৎ ইংরেজদের একটি কামানের গোলা এসে আঘাত করে মীর মর্দানের বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বীর সেনাপতি। তাকে নবাবের তাঁবুতে নিয়ে আসা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। মীর মর্দানের এই মৃত্যু নবাব মেনে নিতে পারেননি, চিন্তায় পড়ে যান নবাব সিরাজ, বৃথা যায় মীর মদনের আত্মত্যাগ।  

মীর মর্দানের যারা অনুগত সৈনিক ছিলেন তারা তাদের প্রিয় সেনাপতির দেহ ফেলে আসেননি যুদ্ধের ময়দানে। তারা তার মৃতদেহকে গোপনে বহন করে নিয়ে আসেন পলাশী গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ফরিদপুর গ্রামে। তাকে সমাহিত করা হয় সেখানেই। কিন্তু ইতিহাস এই বিশ্বাসঘাতকদের ছেড়ে দেয়নি, অপরদিকে সম্মান এবং মর্যাদায় আসীন হয়ে আছেন সেনাপতি মীর মর্দান, মোহনলাল, নয়ে সিং হাজারি ও বাহাদুর খানের মতো দেশপ্রেমিক নবাবের সেনানায়করা। যারা যুগ যুগ ধরে হয়ে থাকবেন বাংলার প্রতিটি মানুষের মনিকোঠার মর্যাদায়। 

Published on:

30/11/2020 16:08

Published By: BIPRADIP DAS (Editor/Publisher's) 


Share This

0 Comments: