নিজস্ব প্রতিবেদন, বুধবার হেরিটেজঃ অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেলো নবাব সিরাজ উদ-দৌলার নবম বংশধর-দের, জানা গিয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে, নীরবে নিভৃতে বর্তমানে তারা বাংলাদেশের ঢাকা শহরের খিলক্ষেত এলাকার লেকসিটি কনকর্ড-এর বৈকালী টাওয়ারে বসবাস করছেন। তাদের এই বসবাসের খবর তথা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের বংশধরদের খবর ভারত বাংলাদেশের অনেকেই জানেন না। রাজধানি ঢাকার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন নবাব সিরাজ উদ-দৌলার নবম বংশধরেরা, ১৭৪০ সালে ৬৬ বছর বয়সে ইরান থেকে আসার পর বাংলার নবাব হন আলিবর্দী খাঁ, সিরাজ উদ-দৌলা ছিলেন আলিবার্দি খাঁ-এর খুবই আদরের নাতি, নবাব সিরাজ উদ-দৌলার জন্ম হয় ১৭২৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। নবাবের মৃত্যু হয় ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাই রাত্রি ১১ টা ৪৫ মিনিটে। (জন্ম ও মৃত্যু তথ্য বিপ্রদ্বীপ দাস কে দিয়েছেন স্বয়ং নবাবসিরাজ উদ-দৌলার নবম বংশধর ~ নবাবজাদা আলী আব্বাস উদ-দৌল্লা), ১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন তৎকালিন অবিভক্ত বাংলার তথা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের বিশ্বাসঘাতকদের হাতে পরাজয়।
নবাব সিরাজ উদ-দৌলার নবম বংশধর নবাবজাদা আলী আব্বাস উদ-দৌল্লা |
২ জুলাই মিরনের নির্দেশে ঘাতকের হাতে সারা দেহকে টুকরো টুকরো করে তার প্রাণ হারানোর মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় বহুকালের জন্য। সিরাজ উদ-দৌলার প্রকৃত নাম মীর্জা মুহম্মদ আলী। সিরাজ উদ-দৌলার আরেক নাম ছিল 'Sir Roger Dowllet' বা 'স্যার রজার দৌলেত' কারণ, অনেক ইংরেজরা তার নাম উচ্চারণ করতে পারত না।
|
|
(১) নবাব সিরাজউদ্দৌলার মেয়ে উম্মে জোহরা ওরফে কুদসিয়া বেগম (প্রথম বংশধর),
(২) জোহরার ছেলে শমসের আলী খান (দ্বিতীয় বংশধর),
(৩) তার ছেলে লুত্ফে আলী (তৃতীয় বংশধর),
(৪) লুত্ফের মেয়ে ফাতেমা বেগম (চতুর্থ বংশধর),
(৫) তার মেয়ে হাসমত আরা বেগম (পঞ্চম বংশধর),
(৬) হাসমত আরার ছেলে সৈয়দ জাকি রেজা (ষষ্ঠ বংশধর),
(৭) তার ছেলে সৈয়দ গোলাম মোর্তজা (সপ্তম বংশধর)
(৮) তার ছেলে সৈয়দ গোলাম মোস্তফা (অষ্টম বংশধর)
(৯) এবং তার ছেলে সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব (নবম বংশধর)
নবাবকে হত্যার পর তার স্ত্রী শিশুকন্যাসহ নানা আলীবর্দী খাঁর স্ত্রী আশরাফুন নেসাকে নৌকায় করে ভাগীরথীর তীর থেকে বুড়িগঙ্গার পাড়ে জিঞ্জিরার একটি প্রাসাদে তাদের আটকে রাখা হয় ৮ বছর। সেখান থেকে আবার তাদের মুর্শিদাবাদে নিয়ে মুক্ত করা হয়। নবাব সিরাজ উদ-দৌলার মৃত্যুর পর থেকে তার ৫ম বংশধর পর্যন্ত কাউকে সরকারি কোনো চাকরি দেয়নি ব্রিটিশ সরকার
নবাবের ৬ষ্ঠ বংশধর সৈয়দ জাকি রেজা ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর কাছে এসে ধরনা দিলে ১৯১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলার গভর্নরের নিকট তাকে একটি চাকরি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি লেখেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তিনি সিরাজ উদ-দৌলার বংশধর। সে অনুরোধের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার সৈয়দ জাকি রেজাকে মুর্শিদাবাদের ডেপুটি সাব-রেজিস্টার পদে নিয়োগ দেন। তার পুত্র সৈয়দ গোলাম মর্তুজা চাকরি করতেন মুর্শিদাবাদের কালেক্টরেট বিভাগে।
সপ্তম বংশধর সৈয়দ গোলাম মুর্তজা ১৯৪৭ সালে মুর্শিদাবাদ থেকে পূর্ব বাংলায় চলে যান। প্রথমে যান রাজশাহীতে, রাজশাহী থেকে খুলনা শহরে একটি বাড়ি কিনে স্থায়ী হন।
১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথিতযশা সাংবাদিক ফজলে লোহানী তার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান (বিটিভি-তে প্রচারিত) 'যদি কিছু মনে না করেন'-এ সৈয়দ গোলাম মুর্তজা-কে পরিচিত করিয়ে দেন। গোলাম মর্তুজার ছেলে সৈয়দ গোলাম মোস্তাফা পাকিস্তান আমলে চাকরি নেন বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে। তিনি এখন ছেলে সন্তানসহ বসবাস করছেন ঢাকা শহরে।তার বড় ছেলে সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব সমাজের গুণীজন, বিত্তবানসহ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা নবাব সিরাজ উদ-দৌলার নামে একটি একাডেমি স্থাপন করতে চান। সে জন্য সহযোগিতার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে বসবাস করা নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বংশধরদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে- এখনও এক ধরনের অজানা আতঙ্ক তাদের মাঝে। সম্ভবত সে আতঙ্ক থেকেই প্রচারবিমুখ হয়ে আছেন তারা। মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন, সমাজে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন।
0 Comments: