বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

১৭৫৭ সালে আসলে এই দিনে কোন যুদ্ধের ঘটনা ছিল না - নিউজ ভারত বাংলা

১৭৫৭ সালে আসলে এই দিনে কোন যুদ্ধের ঘটনা ছিল না
চিত্রঃ আমবাগানের সেই বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র


নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ২৩ জুন ১৭৫৭, আসলে এই দিনে কোন যুদ্ধের ঘটনা ছিল না। ছিল বিশ্বাসঘাতকতা বা ষড়যন্ত্রের খেলা। সিরাজউদ্দৌলা ও বাংলার স্বাধীনতা সেদিন কুচক্রীদের খেলার শিকারে পরিণত হয়েছিল। গৌরবের কথা এই যে, নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও সিরাজ ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলাননি। ইংরেজরা দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে ঠিক তবে সেটা রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মেলাননি দেশপ্রেমী সিরাজউদ্দৌলা। 

https://lhei.co.in/

ছবিতে ক্লিক করে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন 

সিরাজউদ্দৌলা নিজ নিজ স্বদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি বা নিজের সুবিধার জন্য দেশকে অন্যের হাতে তুলেও দেননি। ২ জনই নিঃসন্দেহে দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ও সত্যবাদী বীর ছিলেন। তাঁরা প্রতারণা বা শঠতার আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকারও চেষ্টা করেননি। তাইতো তাঁদের দৃঢ়তা, সাহস ও স্বদেশপ্রেম তাঁদেরকে বিশ্ববীরের মর্যাদা দান করে। নবাব আলিবর্দী খানের প্রাণপ্রিয় নাতি যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলা ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭২৭ ইং সালে তৎকালীন দু বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। সিরাজের সাথে যারা যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের প্রত্যেকে করুণ ভাবে মৃত্যুবরণ করে,তারা হলো- 

১। মীরজাফর- দুরারোগ্য কুষ্ঠ রোগে মীর জাফরের মৃত্যু হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। তার মৃত্যুর আগে নন্দকুমার কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত আনাইয়া তাহার মুখে প্রদান করাইয়াছিলেন। 

২। মীর কাসেম- ইংরেজদের ভয়ে হীনবেশে পালিয়ে যান এবং রাস্তায় রাস্তায় অনাহারে ঘুরে বেড়ান। অবশেষে অজ্ঞাতনামা হয়ে দিল্লীতে তার করুণ মৃত্যু ঘটে। 

৩। মহারাজ নন্দকুমার- মিথ্যা ষড়যন্ত্রে ফাঁসি। 

৪। রবার্ট ক্লাইভ- রবার্ট ক্লাইভের মৃত্যুও মর্মান্তিকভাবে হয়েছিল। তিনি আত্মহত্যা করেন। পলাশী ষড়যন্ত্রের ঘটনা তাকে পরবর্তীতে কোনোদিন মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে দেয়নি। তিনি দেশে ফিরে গিয়ে একদিন বিনাকারণে বাথরুমে ঢুকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজের গলায় নিজের ক্ষুর চালিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

৫। মহাম্মদি বেগ- মাথা গড়বড় অবস্থায় পাগল হয়ে বিনা কারণে কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

৬। জগৎ শেঠ মহাতপ চাঁদ- মীর কাসিম জগৎ শেঠ মহাতপ চাঁদকে অত্যুচ্ছ দুর্গশিখর হইতে গঙ্গাগর্ভে  নিক্ষেপ করেন, মহারাজ স্বরূপচাঁদকেও ঐ সঙ্গে ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য করেন। 

৭। রায়দুর্লভ-  তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে সেখানেই তার করুণ মৃত্যু ঘটে।

 ৮। রাজবল্লভ-  রাজা রাজবল্লভের মৃত্যুও মর্মান্তিকভাবে ঘটেছিল। জানা যায়, রাজবল্লভের কীর্তি নাশ করেই পদ্মা হয় কীর্তিনাশা।

 ৯। ওয়াটসন- ষড়যন্ত্রকারী ওয়াটসন ক্রমাগত ভগ্নস্বাস্থ্য হলে কোনো ওষুধে ফল না পেয়ে কলকাতাতেই করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন।

১০। উমিচাঁদ- মানসিক  ভারসাম্য হারিয়ে  ফেলেন এবং স্মৃতিভ্রমে উন্মাদ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে তার মৃত্যু ঘটে। 

১১। নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাহাদুর- মুঙ্গের দুর্গে অনাহারে মৃত্যু ঘটে।

১২। কৃষ্ণদাস- তাকে গঙ্গাবক্ষে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়।

১৩। ওয়াটস- যুদ্ধের পর কোম্পানির কাজ থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় বিলাতেই অকস্মাৎ মনোরোগে করুণ মৃত্যুমুখে পতিত হন। 

১৪। স্কাফটন- বাংলার বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করে বিলেতে যাওয়ার পথে জাহাজডুবিতে তার অকাল মৃত্যু ঘটে। 

১৫। ইয়ার লতিফ খান - তাকে গোপনে হত্যা করা হয়। 

১৬। দানাশাহ- বিষাক্ত সাপেড় কামড়ে দানা শাহের মৃত্যু ঘটেছিল। 

১৭। মিরন- ব্রিটিশরা মীর কাসিমের সাহায্যে তাহাকে কৌশলপূর্বক নিহত করিয়াছিলো। পরে বজ্রাঘাতে মৃত্যু বলিয়া প্রকাশ করা হয়। মেজর ওয়ালস ছিলেন এই হত্যার নায়ক।

২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে কোন যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধের জয় পরাজয়ও হয়নি। যা হয়েছে তা হলো বিশ্বাসঘাতকতার  প্রতিযোগিতা, পলাশীর ষড়যন্ত্রের যারা নেতৃত্বে দিয়েছিলো পরবর্তীকালে তাদের পরিণতি হয়েছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তির কিছু অংশ দুনিয়াতেই হয়ে যায়। কারণ হয়তো সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ দিতে চান। সেই সুযোগও গ্রহণ না করলে পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে তা প্রমাণ আরব-বাংলা-পাক-ভারত জুড়ে অসংখ্য। মৃত্যুর পরেও বিশ্ববাসী যুগ যুগ তথা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাদের এই অপকর্মের প্রতি তীব্র নিন্দাবাদ প্রদান করে আসছে।   

Published on:
18/02/2021 12:15
Published By: BIPRADIP DAS (Editor/Publisher) 

Share This

0 Comments: