চিত্র: সাধারণতন্ত্র দিবস (ফাইল ছবি) |
ওয়েব ডেস্ক: আজ প্রজাতন্ত্র নয় সাধারণতন্ত্র দিবস। কিন্তু কেন জানেন? একাধিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজাতন্ত্র দিবস মানে যা সাধারণ তন্ত্র দিবস মানেও তাই কিন্তু মানে এক বোঝালেও প্রকৃত অর্থই আলাদা। প্রজা শব্দটি ব্যবহৃত হত রাজ-শাসন আমলে। তখন প্রজা বলা হত। যেমন নবাব আমল বা রাজা,সম্রাট শাসন আমলে। কিন্তু এখন তো আর ভারতবর্ষে কোথাও রাজা-রানি কিংবা নবাবের শাসনভার নেই। এখন সংবিধান অনুসারে আইন-প্রণায়ন করা হয়। স্বয়ং সাংসদ,বিধায়ক থেকে মুখ্যমন্ত্রী আবার প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি সর্বস্তরের শাসকরাই সংবিধান মানতে বাধ্য। পাশাপাশি ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস ভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস।
বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রী,মুখ্যমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানান। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিয়ে বলেন,"আসুন!আমরা আরও একবার সংবিধানের বুনিয়াদি কাঠামো রক্ষার শপথ নিই"। এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও শপথ নিয়ে টুইটারে বলেন,"আসুন, আমরা সবাই গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে রক্ষা করি"। আজকের দিনেই রাজধানী দিল্লীর রাজপথে কামান,যুদ্ধবিমান,এবং সেনাদের কসরত করতে দেখা যাবে। ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়। সাধারন্তন্ত্র দিবসে প্রতি বছর লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ স্বাধীন দেশ ভারতের তেরঙ্গা পতাকা উত্তলন করা হয়। এই দিনটি ভারতের অনন্য তিনটি স্বাধীনতা সূর্যের মধ্যের অন্যতম। প্রথমটি ২৩-শে জানুয়ারি যা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী। দ্বিতীয়টি ২৬-শে জানুয়ারি যা প্রজাতন্ত্র দিবস(সাধারণতন্ত্র দিবস) নামে আখ্যায়িত। তৃতীয়টি, ১৫-ই আগস্ট যা ভারতের স্বাধীনতার সূর্য ওঠার দিন নামে আখ্যায়িত।
আবার এটা মনে রাখা দরকার ১৬-ই আগস্ট নদীয়ার স্বাধীনতা দিবস, যদিও নদীয়া পূর্বে একটি রাজ শাসিত রাজ্য থাকলেও বর্তমানে একটি ভারতের অঙ্গ রাজ্যের জেলা। নাম নদীয়া জেলা। জানা যায়, ১৫- আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলেও নদীয়া তখনও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। তখনকার নদীয়ার মধ্যে কৃষ্ণনগর এবং রানাঘাট ছিলো হিন্দু অধ্যুষ্যিত অঞ্চল। এখানকার রাজা বা জমিদার সহ সাধারণ প্রজারা মুসলিম দেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতে নারাজ তাই ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মেলবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত হতে চান। এরপর কৃষ্ণনগরের রাজা সৌরিশচন্দ্র রায়ের প্রতিনিধি দরবার হলেন তখনকার ভারতের গর্ভনর জেনারেল ব্রিটিশ মাউন্ট ব্যাটেনের সামনে। কেন পাকিস্তানের সাথে আবদ্ধ হতে চায়না নদীয়াবাসী তা বুঝিয়ে বললেন। সেই মতো মাউন্ট ব্যাটেনও বুঝলেন। আর এরপর নিলো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, পাকিস্তান থেকে আলাদা করা হল নদীয়েকে এবং ভারতের সাথে জুড়ে দেওয়া হল। যেখানে এককালীন শাসন করতেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাহাদুর। যদিও বর্তমানে জেলার হওয়ার আর রাজ শাসন নেই তবে রাজ প্যালেস এখনও বিদ্যমান। যেখানে আজও গেলে দেখা মেলে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাহাদুরের ব্যবহৃত বিভিন্ন রাজ-সিংহাসন থেকে তখনকার দিনে রাজপ্রাসাদে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ রাজার ব্যবহৃত সামগ্রীগুলি। সেখানে ১৬-ই আগস্ট নদীয়ার স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আগের বাক্যে যদিও বলা হয়নি নদীয়া নাম আগে ছিলনা আগে ছিল নবদ্বীপ জেলা ১৯৪৮ সালে ২৩ -শে ফেব্রিয়ারিতে নবদ্বীপ নাম থেকে নদীয়া জেলা এবং নদীয়া থানার নাম পরিবর্তন করে নবদ্বীপ থানা করা হয়।
২৬ -শে জানুয়ারি কুচকাওয়াজ সকাল ১০ টায় শুরু হয় এবং বেলা ১২ টায় শেষ হয়। এই কুচকাওয়াজে ভারতের রাষ্ট্রপতি পতাকা উত্তলনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান পর্ব। এদিন সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী,বিমানবাহিনী বিভিন্ন রেজিমেন্ট থেকে বিভিন্ন ব্যান্ড বাজিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট তারপর লালকেল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের সংবিধান যুক্তরাজ্যের সংসদে পাশ হয় এবং বলাই বাহুল্য তবুও উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সূর্য যেভাবে ডুবেছিল পলাশির প্রান্তে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের মাধ্যমে তেমনি পরবর্তীকালে ২০০ বছরের ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন আমলে হাজার-কোটি প্রাণের মাধ্যমে লড়াই করে ফের ১৫-ই আগষ্ট ভারতের নতুন স্বাধীনতার সূর্য উদীয়মান হয়েছিল।
- Published By: BIPRADIP DAS
0 Comments: