রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

সাত রঙের দেশে! নবাবজাদার প্রতিবেদনে গোলাপ ফুলের বিস্তারিত

in-the-land-of-seven-colors-details-of-roses-in-nawabzada-ali-abbus-ud-dullrah-report
চিত্র: নবাবজাদা আলী আব্বাস উদ-দৌল্লার প্রিয় গোলাপ ফুল

ওয়েব ডেস্ক: বন্ধুরা জানেন কি? ভালোবাসার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উহার গোলাপ ফুল পৃথিবীর হৃদয়ে সর্বপ্রথম কোথায় ফুটেছিল।  সেই সুদূর পারস্যের ফুল বনে।  সম্ভবত ১৬০০ শতাব্দীতে। গোলাপ ফুল পরম করুণাময় আল্লাহ তালার এক অপরূপ সৃষ্টি, মানবজাতির জন্য। গোলাপ ফুলকে দেশে-দেশে ফুলের রাজা বলা হয়। পারস্যবাসী ফুলকে ‘গোল’ বা ‘গুল’ বলে আর গোলাপ তাদের কাছে ‘গোলাব’ নামে পরিচিত। ফুল বাগানকে তারা ‘গোলিস্তান’ আবার ‘গুলিস্তান’ বলেন।

দেশটির শুধু ‘কাশান’ প্রদেশেই ব্যাপক হারে গোলাপের চাষাবাদ হয়। কত সব বাহারি রঙের গোলাপ ফুলের বাহারই-না  আছে পারস্যের ফুল বনে।  লাল, হলুদ, গোলাপি, কমলা, বেগুনি, সাদা, কালো, পিচ এবং আরও সব নানা রঙের বাহার। পারস্যের এই অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় সৃষ্টির প্রতিটি রঙেই দেখেছি ভালোবাসার কথা। গোলাপ ফুলের প্রতিটি রঙের আলাদা অর্থ থাকলেও পারস্যবাসীর হৃদয়ের সুর:‘ভালোবাসি’ আমরা ফুল ভালোবাসি। এযেন ভালোবাসার সাত রং। 

এজন্যই দেশে দেশে ভালোবাসার উপহার হিসেবে একগুচ্ছ গোলাপ ফুলের গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এ তো নিছক ফুলই নয়, এযে প্রেরক এবং প্রাপকের মধ্যে যোগাযোগের মেলবন্ধন, হৃদয়ের গভীরের উষ্ণ বার্তা বহনকারী মাধ্যম! প্রথম ভালোবাসা জানাতে, হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গৌরব ফিরিয়ে আনতে, গভীর ভালোবাসাকে আরও গভীরে পৌঁছে দিতে, কাউকে ভালোবাসা মিশ্রিত শ্রদ্ধা জানাতে, শত্রুর মন জয় করতে, প্রিয়জনের আনন্দের অংশীদার হতে, শোকার্তকে সহানুভূতিপূর্ণ ভালোবাসা জানাতে একগুচ্ছ গোলাপই যথেষ্ট। তা আবার পারস্যের সৌরভ যদি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। দেশে দেশে আজ লাল গোলাপ অনেক জিনিসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।  প্রধান অর্থ হচ্ছে ‘প্রেমময় ভালোবাসা’। লাল গোলাপ উচ্চারণের ভেতর জড়িয়ে থাকে আবেগ আর উষ্ণতা মাখানো রোমান্স। হয়তো এ কারণেই লাল গোলাপের আরেক নাম ‘প্রেমিকের গোলাপ’।

সাদা গোলাপ: সাদা গোলাপ ফুল বিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতার প্রতীক। একগুচ্ছ সাদা গোলাপ উপহার দেওয়ার ভেতর নিহিত থাকে অন্তরের শুভ ইচ্ছার কথা, ভালোবাসার পবিত্রতার কথা, একের প্রতি অপরের একনিষ্ঠতা, অঙ্গীকার এবং নির্ভরতার কথা।

হলুদ গোলাপ: হলুদ গোলাপ ফুল অপরকে স্বাগত জানাতে, বন্ধুত্বের প্রতীক, পরম নির্ভরতা, আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসার প্রতীক। অপরকে স্বাগত জানাতে, নতুনকে আহ্বান করতে, নতুন মা, নতুন গ্র্যাজুয়েট অথবা বাগদান বা বিয়ের আশীর্বাদ হয়ে যাওয়া পাত্রপাত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে হলুদ গোলাপের জুড়ি মেলা ভার ! হলুদ গোলাপ নতুন জীবন শুরুর আনন্দ ও ভালোবাসার প্রতীক।

গোলাপি গোলাপ: গোলাপ থেকেই গোলাপি। গোলাপি গোলাপ ফুলের গ্রহণযোগ্যতা সর্বকালের, সর্বযুগের ! আভিজাত্য এবং হালকা গোলাপি রঙের গোলাপ সুখ, রোমান্স, আনন্দ প্রকাশের প্রতীক এবং গাঢ় গোলাপি গোলাপ প্রাপকের প্রতি প্রেরকের ভালোবাসার স্বীকৃতি, হৃদয়ের স্মিগ্ধ ভালোবাসার প্রকাশ।

ল্যাভেন্ডার গোলাপ: ‘প্রথম দর্শনেই প্রেম’ প্রকাশের অন্যতম উপহার হচ্ছে একগুচ্ছ ল্যাভেন্ডার গোলাপ। ল্যাভেন্ডার বা হালকা বেগুনি রং একজনের প্রতি আরেকজনের গভীর ভালোবাসার বর্ণনা করে। প্রিয়জনকে ভালোবাসার গভীরতা বোঝাতে ল্যাভেন্ডার গোলাপের জুড়ি নেই।

কালো গোলাপ: কালো গোলাপ মানে হচ্ছে পুনর্জন্ম অথবা নতুন করে শুরু। এই ফুলটি সাধারণত কালচে লাল বা কালচে মেরুন রঙের হয়ে থাকে। ভালোবাসার মৃত্যু নেই, পারস্পরিক সম্পর্ক ভেঙে গেলেও সম্পর্ক জোড়া দিতে এই রঙের গোলাপের জুড়ি নেই। আরেক পক্ষ মনে করেন কালো গোলাপ শুধু শত্রু পক্ষের জন্য নির্ধারিত। যে যাই বলুক ফুল হলো সুন্দরের প্রতীক। পবিত্রতার প্রতীক। তাইতো ভালোবাসায় পরাজয় বলে কিছু নেই, হেরে যাওয়া জীবনে কালো গোলাপ ‘এসোনা আবার শুরু করি’ বার্তা বহন করে।

লাল গোলাপ: সব রঙের গোলাপেই ভালোবাসার কোনো না কোনো কথালেখা আছে, তবে লাল রঙের গোলাপ ফুল ভালোবাসার নিরবচ্ছিন্ন প্রতীক। লাল মানে উষ্ণতা, লাল মানেই রোমান্স, লাল মানে সাহস!
প্রিয় মানুষটিকে যদি একগুচ্ছ লাল গোলাপ ফুল অথবা বাগান থেকে তুলে নিয়ে আসা একটি তরতাজা ফুটন্ত গোলাপ দেওয়া যায়, যার অর্থ ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ। এতে স্বর্গীয় ভালোবাসা পৃথিবীতেই মূর্ত হয়ে ওঠে! আর তাইতো লাল গোলাপ মানেই ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা, লাল গোলাপ মানেই প্রেম, লাল গোলাপের শুভেচ্ছা মানেই পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আকাক্সক্ষার বহিঃপ্রকাশ।

‘আজিতা ঘাহরে মান’ (১৯৬২) আধুনিক ইরানি কবিতার জগতে এক উজ্জ্বল নাম। এই কবির জন্ম ইরানের মাশহাদ প্রদেশে। শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের কিছুকাল তিনি পারস্যের সৌরভে কাটিয়েছেন। তিনি বিদেশি অনেক ভাষার কবিতা ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। ফার্সি ও ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি কবিতা লেখেন। ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’ মুক্ত ছন্দে লেখা তাঁর দীর্ঘ কবিতাটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইরানের একজন কবি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে কবিতা লিখবেন। তা অনেকের কাছে অকল্পনীয়। ইরানের সমাজের ১টি শক্তিশালী অংশে সেইন্ট ভ্যালেন্টাই (ভ্যালেন্টিনাস) ও তাকে কারাদ- প্রদানকারী রোমান সম্রাট আস্তেরিয়াসের কন্যার প্রেম-প্রণয় কখনো অনুমোদনপ্রাপ্ত বিষয় নয়। তাঁর কবিতার পরাবাস্তবতার সঙ্গে সমকালীন অনেক অনুষঙ্গ রয়েছে। 

“মধুর সব দৃশ্যকে আমি কুৎসিত করে দেবো, পাখির পরিবর্তে আমি আঁকবো বৃক্ষচূড়ায় ঘোড়ার ছবি। রাশিয়ার পুতুল খেলার স্থূলাঙ্গী মানুষের কথা মনে আছে? তোমার টেবিল জুড়ে এঁকে রাখবো ঐসব মানুষের ছবি। তোমাকে বানিয়ে দেবো সিংহ আর বৃক্ষের মিলনে শংকর কাঠ বেড়াল! প্রতিটি তীর তোমার দিকে তাক করা। এই পরিচিত পথ তোমার দিকেই ফিরে গেছে। প্রেম লাল গোলাপ যেন, যা আমি তোমার জানালা তাক করে ছুঁড়ে মারি” (আজিতা ঘাহরেমানের কবিতার সংক্ষিপ্ত অংশ)।

বন্ধুরা জানো কি? পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কি? সততা,বিশ্বস্ততা। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী জিনিস কি? আত্মবিশ্বাস আর ভালোবাস, ভালোবাসা, ভালোবাসা। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে শক্তিশালী জাদু কোনটি? ফুলের সৌরভ আর হৃদয়ের বন্ধনের যাদু। বন্ধুরা সত্যি! ইরানের রঙের উৎসবে আপনিও রঙিন হয়ে উঠবেন। এই রঙ সততার রঙ, এই রঙ দেশপ্রেমের রঙ, এই রঙ বন্ধুত্বের রঙ, এই রঙ প্রকৃতির রঙ, এই রঙ বাহারি সব ফুলের রঙ, এই রঙ ভালোবাসার রঙ। আর পারস্যের রঙের ছোঁয়ায় নিজেকে রাঙাতে প্রিয়জনসহ বেরিয়ে পড়ুন ইরান ভ্রমণে। ২১ শে মার্চ ফারসি নতুন  বছরের  প্রহম দিন। দেশ বিদেশের সকলকে নওরোজের শুভেচ্ছা। শুভ  ফারসি নববর্ষ  নওরোজ।
  • লেখক: নবাব সিরাজউদ্দৌলার ৯ম রক্তধারা প্রজন্ম নবাবজাদা আলী আব্বাস উদ-দৌল্লাহ (বাংলাদেশ) 
  • Published By: BIPRADIP DAS

Share This

0 Comments: