মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

"কাপ্তান" ইমরান খানের রাজনৈতিক উন্থান-পতনের ক্যারিয়ার

Captain-pakistan-pm-Imran-Khan-career-of-political-ups-and-downs
চিত্র: ২২তম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

ওয়েব ডেস্ক: দেশের মসনদের গদি হারিয়েছেন আগেই! নামের আগে বসবে আজ থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ছিলেন দেশের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। চোরের সাথে থাকতে চাননা বলে তার তেহেরিক-ই-ইনসাফ দলের সাংসদেও সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই ইস্তফা দেয় সমস্ত সাংসদ সদস্য। ফলে আর বিরোধীদের বেশী কষ্ট করতে হয়নি নতুন প্রধানমন্ত্রী ভোটাভুটিতে। ইমরান খানের জীবনের উন্থান-পতন ঠিক হার না মানা জীবনের মতো। হারব কিন্তু হাল ছাড়ব না। তার প্রমাণ ইমরান খানের ক্রিকেট জীবনী থেকেই পাওয়া যায়। তিনি পাকিস্তানের জন্য বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলে যা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। 

এই প্রসঙ্গে, যা নিয়ে ইমরান খান নিজেও বলেছেন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে, "আমার জীবনের স্টেটমেন্টে কোনো হারিনি, আপনার পুরোনো ভিডিও বা ছবিতেও তা পাবেননা। আর হারবও না, খেলা শেষ অবধি লড়ে যাবো আমি"। তাই করেছিলেন। সংসদে নিম্মকক্ষে আয়োজিত অনাস্থা ভোটে হার জেনেও স্পিকারকে দিয়ে অনাস্থা ভোট বাতিল করে জনসাধারণের নির্বাচনের দিকে "কাপ্তান" ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখার ভাগ্য ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু দেশের সর্বচ্চ আদলত স্পিকারের এই সিদ্ধান্ত খারিজ করে ফের অনাস্থা ভোটের দিকে ইমরান খানের ভাগ্য ঝুলিয়ে দেয়। ব্যাস! তাতেই সব ইতিহাস পালটে গেলো। 

উল্লেখ্য, পাকিস্তান আজ স্বাধীনতার বয়স ৭৫ বছর বয়স। এই দেশের সংবিধান অন্য-অন্য দেশের সংবিধানের তুলনায় ভিন্ন ও নাটকীয়। পাকিস্তানে আজ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ উত্তীর্ণ করতে পারেনি। এমনকি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও পূর্ণ মেয়াদ উত্তীর্ণ করতে অক্ষম হয়েছেন বার-বার। শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তেও একপ্রকার বাধ্য হয়েছিল জনসাধারণের বিক্ষোভের মুখে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাকিস্তানে যেই সরকার আসুক না কেন! তার উপর দেশের সেনার প্রভাব রয়েছে। সরকার চলে সেনাপ্রধানের অঙ্গুলিহেলনেই। পাকিস্তানের পূর্বের ইতিহাস দেখলে সহজ ভাবেই বলা যায়, "দেশের সরকার কীভাবে চলবে? বিদেশনীতি কী হবে? তা সবই সিদ্ধান্ত নেয় পাক-সেনাপ্রধান"। 

কয়েকদিন আগেই ইমরান খান ভারতের বিদেশনীতি ও ভারতীয় সেনার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ভারতের বিদেশনীতি যথেষ্ট স্বচ্ছ। সেখানে সেনা তাদের দেশের সরকারের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করেনা বরং সেনা সরকার দ্বারা পরিচালিত। ভারতের বিদেশনীতিও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ"। "কাপ্তান ইমরান খানের" প্রথম রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ২০১১ সালের শেষের দিকে। তার নতুন দল তেহেরিক-ই-ইনসাফ ২৫-শে অক্টোবর এবং ৩০-শে অক্টোবর দুই জনসভাতে উপচে পড়া ভিড় জমে। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে পিটিআই দল। প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। অবশেষে ২০১৮ সালে দেশের মসনদে বসে "কাপ্তান" ইমরান খান। সরকারে এসেই তার প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিলো, "দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, সরকারের বিদেশনীতি হবে স্বতন্ত্র-স্বাধীন, দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে পুষ্ট করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আদতে কিছুই বাস্তবে পরিনত হয়নি। এই কারণ দেখিয়েই সংসদে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলো।     

সংসদে মোট আসন ৩৪২ টি তার মধ্যে অনাস্থা ভোটে ম্যাজিক ফিগার ১৭২ টি এবং ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪ টি। অথাৎ নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের পক্ষে ১৭৪ টি ভোট পড়ে। এক কথায় পাকিস্তানে ফের জনগণের রায়ের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন শাহবাজ। তিনি একজন সেনার অঙ্গুলি হেলনে ও সংসদের বিভিন্ন বিরোধী জোটের সহ সংসদের নিম্মকক্ষ ন্যাশানাল অ্যাসেম্বলি দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। শাহবাজের নিজের দল নাম মুসলিম লীগ নওয়াজ। তিনি নিজের দলের সমর্থন তো পেয়েছেন বটেই পাশাপাশি পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল পার্টির বিশেষ সমর্থন পেয়েছেন সংসদের ভোটাভুটিতে। তবে ইমরান খানের দল পিটিআই বসে থাকেনি তারাও তাদের দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছিলো শাহ মেহমদ কুরেশিকে। কিন্তু নিজের দলের মধ্যে ভাঙ্গন টের পেয়ে দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের নির্দেশে পিটিআই দলের সমস্ত সংসদ সদস্য ওয়ার্কআউট করেন।   

  • Published By: BIPRADIP DAS

Share This

0 Comments: