রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২

খোদ তৃনমূলের নেতাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সরকারি সুবিধা পাচ্ছেনা

tmc-leader-imran-ali-themselves-are-not-getting-government-benefits-on-swasthya-sathi-card
চিত্র: তৃনমূলের বুথ সভাপতি ইমরান আলি শয্যাশায়ী

বিশ্বজিৎ মন্ডল: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে পাচ্ছেন না বিনামূল্যে চিকিৎসা। দুয়ারে রেশন চালু থাকলেও তাঁর বাড়িতে কেউ রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেয়নি। কোনও সাধারণ মানুষ নয়, এই অভিযোগ এক তৃণমূল নেতার। ৮০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সরকারি শংসাপত্র থাকলেও এভাবেই তিনি সরকারি সুযোগ সুবিধে থেকে ব্রাত্য হয়ে রয়েছেন। সমস্যা সমাধানে তিনি কথা বলেছেন বিডিওর সঙ্গে। শুধু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। সমস্যার কথা জানিয়েছেন এলাকার বিধায়ক ও সাংসদকেও। বিধায়ক শুধুমাত্র তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর ব্যবহৃত একটি হুইল চেয়ার ছাড়া আর কিছু দেননি। সাংসদ তো সেটুকুও করেননি। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ওই নেতা যোগাযোগ করেন খোদ নবান্নে। সেখান থেকেও হতাশা ছাড়া আর কিছু জোটেনি তাঁর। তিনি জানাচ্ছেন, সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধে না পেলে তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করবেন। গোটা ঘটনা জেনে বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে যাচ্ছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান।

ওই তৃণমূল নেতার নাম ইমরান আলি (২৯)। বাড়ি রতুয়া-২ ব্লকের আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের পিরপুর গ্রামে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। দু’বছরের মধ্যে করোনায় হারিয়েছেন বাবা-মাকে। প্রথমে মারা যান বাবা শেখ হেলু, পরে মারা যান মা মলিনা বেওয়া। বাড়িতে এখন রয়েছেন তাঁর স্ত্রী মর্জিনা বিবি। তিনি জানাচ্ছেন, ছোটতে ফুটবল খেলতে গিয়ে তাঁর পায়ে ভীষণ ব্যথা হয়। তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়েও যাওয়া হয়। চিকিৎসক তাঁর অভিভাবকদের জানান, তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক সংকটে তাঁর উন্নত চিকিৎসা আর হয়নি। 

এখন তিনি ৮০ শতাংশ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তার সরকারি শংসাপত্রও তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের ৩৩৬ নম্বর বুথ সভাপতি। তাই জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের চেনেন। নিজের সমস্যা নিয়ে বারবার সবার দ্বারস্থ হয়েছেন। জানিয়েছেন নবান্নেও। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।  ইমরান বলেন, ‘আমার কাছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও সরকারি হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমগুলি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। বলছে, এই কার্ডে আমার চিকিৎসা হবে না। তাহলে সরকার এই কার্ড আমাদের মতো মানুষকে দিল কেন? মানবিক মুখ্যমন্ত্রী আমার মতো লোকজনের কথা ভেবেই রাজ্যে দুয়ারে রেশন প্রকল্প শুরু করেছেন। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কেউ আমার বাড়িতে রেশনের মাল দিয়ে যায়নি। আমি শিক্ষিত। 

মাধ্যমিকে ৬৩ শতাংশ এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৭৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ পাইনি। আমার স্ত্রী টুকটাক কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছে। আর এলাকার মানুষ নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করছে। তার উপরেই বেঁচে রয়েছি। কিন্তু এভাবে কতদিন? বিডিও নিতীশকুমার মাহাতোকে আমি ফোন করে জানিয়েছি, আমার রেশনের মাল যেন বাড়িতে দিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি শুধু আশ্বাসটুকুই দিয়েছেন। আর কিছু দিতে পারেননি। বিধায়ক, সাংসদ, এমনকি নবান্নতেও আমার সমস্যার কথা জানিয়ে সহায়তা চেয়েছি। কোথাও থেকে কিছু পাইনি। এখন ওষুধপত্র কিংবা খাবারের টাকা জোগাড় করাটাই আমার কাছে চরম সমস্যার। তাই প্রশাসন কিংবা রাজ্য সরকার যদি আমার জন্য কিছু না করে, তবে স্বেচ্ছামৃত্যু ছাড়া আমার দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। আমাকে সে’পথেই হাঁটতে হবে।’

ঘটনাটি জানানো হলে আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান চন্দনা মণ্ডল বলেন, ‘ইমরান আলি আমাদের দলেরই বুথ সভাপতি। তিনি নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতা রয়েছে। কিন্তু তাঁর বর্তমান সমস্যার কথা আমার জানা ছিল না। শুনলাম, তিনি কোনও কাজ করতে চাইছেন। আমি আজই তাঁর বাড়িতে যাচ্ছি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পঞ্চায়েতের তরফে যতটা সাহায্য করা যায়, তাঁকে করা হবে।’

  • Published By: BIPRADIP DAS


Share This

0 Comments: