বুধবার, ১১ মে, ২০২২

LPG Gas: এলপিজি গ্যাসের দাম বারবার বৃদ্ধি ঘটছে কেন?

14-kg-non-commercial-lpg-cylinder-price-hiked
সংগ্রহীত ছবি

সজল দাশগুপ্ত: গত দুবছর করোনার জেরে লকডাউন সারাভারত। ফলে দেশের অর্থনীতির চাকাও স্তব্ধ। দেশের বহু মানুষ বিভিন্ন সংস্থার স্থায়ী কাজ তো বটেই খেটে খাওয়া মানুষ গুলোও নিজস্ব হাতের কাজ হারিয়েছিলেন। ফলে হুহু করে বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছিলো। বহু মানুষের মাসিক আয় কমেছে। ফলস্বরুপ, সংসারের হেশেল সামলাতে কম টাকায় কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। বহু মানুষের হাতে টাকা নেই। উপরে সংসার চালাতে গিয়ে ধাড়ে জড়িয়ে গেছে। তার উপরে পেট্রোল-ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দামবৃদ্ধি। স্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ছে খাবার সহ মশলার।

ভারত জুড়ে বাড়ির রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের (১৪.২ কেজির) দাম ৫০ টাকা বাড়াল তেলের বিভিন্ন বিপণন সংস্থাগুলি। এখন দিল্লিতে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে হল ৯৯৯.৫০ টাকা। কলকাতায় হাজার টাকা ছাড়াল দাম। সিলিন্ডার পিছু দর বেড়ে ১০২৬ টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল ব্যারেল পিছু ১১০.৪০ ডলারে চলে গিয়েছে। ব্যানিজিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ১৯ কেজি সিলিন্ডারের দাম সাড়ে ৯ টাকা কমানো হয়েছে যদিও। ফলে নতুন দাম হয়েছে ২৪৪৫ টাকা। সম্প্রতিই ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম।

গত ১ মে থেকে ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম ১০২ টাকা ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছিল। খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৩৫৫ টাকা ৫০ পয়সা। একইভাবে ছোটো ৫ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৫৫ টাকায়। এহেন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “ রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে গোটা দুনিয়াতেই অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন দেশে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। সেই সাথে একইভাবে আমাদের দেশেও দাম বেড়েছে তেলের।” 

এবার, আসি কেন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে? বা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবার কারণঃ 
আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড তেলের দাম যত বৃদ্ধি পাবে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে রান্নার গ্যাসের দাম। বর্তমানে ক্রুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১১০.৪০ ডলার। অপরিশোধিত তেলের উপরেই নির্ভর করে দেশে পেট্রোল-ডিজেল ও এলপিজির দাম। পেট্রোল ও ডিজেলের দামবৃদ্ধি নিয়ে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কাঠগড়ায় তুলেছিলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। উল্লেখ্য, ইউপিএ কেন্দ্রীয় সরকারের আমল থেকেই গ্যাস সিলিন্ডারের গ্রাহকদের ভুতুর্কি সরাসরি ব্যাংক খাতায় জমা করা হত কিন্তু তা শুধুই ছিলো হাতে গোনা। কিন্তু মোদী সরকার ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় আসাতে দেশের প্রতিটি মানুষের ব্যাংকে গ্যাসের ভুতুর্কি জমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সেই মতো কাজও চলছিলো, কিন্তু অভিযোগ গত ২ মাস ধরে আর ভুতুর্কি জমা পড়ছেনা তাতেই বাড়ছে ক্ষোভ জনসাধারণের।

সংসদে এই নিয়ে তমুল সরগরম! বিরোধীদের বক্তব্য, ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষের উপরে ব্যাপক আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে যার জেরে সংসার টানাই বড় বালাই। এদিকে সরকারের যুক্তি, আন্তর্জাতিক দামের উপর নির্ভর করেই দেশের গ্যাস ও তেলের দাম সিদ্ধান্ত হয়। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বিশেষ যুক্তি, "রাজ্য সরকারগুলিও অতিরিক্ত কর বসায়" এতেই আরও দাম চড়া হচ্ছে।

এবার আমরা একনজরে দেখে নিই, ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সালের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কিছু রিপোর্ট।
২০১৩ সালের ১১ই ডিসেম্বরে গ্যাসের দাম ছিলো কলকাতায় ১০৫০ টাকা যা আমরা জানি ইউপিএ সরকারের আমলে এদিকে ২০১৫ সালে মে মাসে ১ তারিখ কলকাতায় গ্যাসের দাম কমে দাঁড়ায় ৬৪৬ টাকা যা মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর। অন্যদিকে লক্ষ্যনীয়, একই সরকারের আমলেই দাম বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে মার্চ মাসে ২২ তারিখে গ্যাসের দাম ফের বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭৬ টাকা আর এবার ১০২৬ টাকা যা মোদী সরকারের আমলে। অতএব এখান বলাই বাহুল্য, মোদী নয় ইউপিএ নয় বাম নয়, তেল কিংবা গ্যাস! যা নির্ভর করে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রুড তেলের দামের উপর। যার প্রভাব ফেলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংসারে।
  • Published By: BIPRADIP DAS

Share This

0 Comments: